রবীন্দ্রনাথের বাঁশি | নির্মলেন্দু গুণ
রবীন্দ্রনাথের বাঁশি
__নির্মলেন্দু গুণ
যারা গান গাইতো বাঁশিতে আঙুল রেখে,
যারা কবিতা লিখতো মধ্যরাতে, সেইসব চাষী,
সেইসব কারখানার শ্রমিক, যারা ইস্পাতের
আসল নির্মাতা, যারা তৈরি করতো স্নো-বিস্কিট,
আমার জন্য শার্ট, নীলিমার জন্য শাড়ি, তারা এখন
অন্য মানুষ, তাদের বাড়ি এখন প্রতিরোধের দুর্গ।
যারা গান গাইতো বাঁশিতে আঙুল রেখে,
যারা ছাত্র ছিল পাঠশালার, বিশ্বের, সভ্যতার
কিংবা প্রকৃতির, সেইসব ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক
একত্রে মিলিত হয়ে ওরা এখন অন্যরকম;
ওরা এখন গান গায় না, ওরা এখন অন্য মানুষ।
কাঠের লাঙল যারা চেপে রাখতো মাটির ঔরসে,
সেইসব শিল্পী, সেইসব শ্রমিক,
যারা গান গাইতো বাঁশিতে আঙুল রেখে,
যারা স্বপ্ন দেখতো রাতে; ধলেশ্বরী নদী-তীরে
পিসীদের গ্রাম থেকে ওরা এখন শহরে আসছে।
কাঠের লাঙল ফেলে লোহার অস্ত্র নিয়েছে হাতে,
কপালে বেঁধেছে লালসালুর আকাশ,
শহর জয়ের উল্লাসে ওরা রবীন্দ্রনাথকে বলছে
স্বাধীনতা, রবীন্দ্রনাথের গানকে বলছে স্টেনগান।
যারা গান গাইতো, বাঁশিতে আঙুল রেখে
যারা কবিতা লিখতো রাতে, সেইসব চাষী
আজ যুদ্ধের অভিজ্ঞ-কৃষক।
তোমার জন্য বন্দুকের নল আজ আমারো হাতের বাঁশি।
Posted on November 2, 2020, in আবৃত্তির কবিতা, নির্মলেন্দু গুণ, মুক্তিযুদ্ধ/স্বাধীনতা and tagged নির্মলেন্দু গুণ, রবীন্দ্রনাথের বাঁশি. Bookmark the permalink. Leave a comment.
Leave a comment
Comments 0