বাসর | হুমায়ূন আহমেদ


বাসর
__হুমায়ূন আহমেদ

কপাটহীন একটা অস্থির ঘরে তার সঙ্গে দেখা।
লোহার তৈরি ছোট্ট একটা ঘর।
বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোন যোগ নেই।
ঘরটা শুধু উঠছে আর নামছে।
নামছে আর উঠছে।
মানুষ ক্লান্ত হয়–
এ ঘরের কোন ক্লান্তি নেই।
এ রকম একটা ঘরেই বোধহয় বেহুলার বাসর হয়েছিল।
নিশ্ছিদ্র লোহার একটা ঘর।
কোন সাপ সেখানে ঢুকতে পারবে না।
হিস হিস করে বলতে পারবে না, পাপ করো।
পৃথিবীর সব আনন্দ পাপে।
পুণ্য আনন্দহীন। উল্লাসহীন।
পুণ্য করবে আকাশের ফিরিশতারা।
কারণ পুণ্য করার জন্যেই তাদের তৈরি করা হয়েছে।
লোহার সেই ঘরে ঢোকার জন্য সাপটা পথ খুঁজছিলো।
সেই ফাঁকে বেহুলা তাঁর স্বামীকে বললেন,
কী হয়েছে, তুমি ঘামছ কেন?
আর তখন একটা সুতা সাপ ঢুকে গেলো।
ফিসফিস করে কোন একটা পরামর্শ দিতে গেলো।
বেহুলা সেই পরামর্শ শুনলেন না বলেই কি লখিন্দরকে মরতে হল?

তার সঙ্গে আমার দেখা কপাটহীন একটা অস্থির ঘরে।
ঘরটা শুধু ওঠে আর নামে।
আমি তাকে বলতে গেলাম-
আচ্ছা শুনুন, আপনার কি মনে হচ্ছে না
এই ঘরটা আসলে আমাদের বাসর ঘর?
আপনি আর কেউ নন, আপনি বেহুলা।
যেই আপনি ভালবেসে আমাকে কিছু বলতে যাবেন
ওম্নি একটা সুতা সাপ এসে আমাকে কামড়ে দেবে।
আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন।
দয়া করে কিছু বলবেন না।

#কাব্যগ্রন্থ: গৃহত্যাগী জোছনা

atOptions = { ‘key’ : ‘bb566e4ce1b69a5859f0563df2c0d6fb’, ‘format’ : ‘iframe’, ‘height’ : 60, ‘width’ : 468, ‘params’ : {} }; document.write(”);

রবীন্দ্রনাথের বাঁশি | নির্মলেন্দু গুণ


Nirmalendu Goon

নির্মলেন্দু গুণ

রবীন্দ্রনাথের বাঁশি
__নির্মলেন্দু গুণ

যারা গান গাইতো বাঁশিতে আঙুল রেখে,
যারা কবিতা লিখতো মধ্যরাতে, সেইসব চাষী,
সেইসব কারখানার শ্রমিক, যারা ইস্পাতের
আসল নির্মাতা, যারা তৈরি করতো স্নো-বিস্কিট,
আমার জন্য শার্ট, নীলিমার জন্য শাড়ি, তারা এখন
অন্য মানুষ, তাদের বাড়ি এখন প্রতিরোধের দুর্গ।

যারা গান গাইতো বাঁশিতে আঙুল রেখে,
যারা ছাত্র ছিল পাঠশালার, বিশ্বের, সভ্যতার
কিংবা প্রকৃতির, সেইসব ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক
একত্রে মিলিত হয়ে ওরা এখন অন্যরকম;
ওরা এখন গান গায় না, ওরা এখন অন্য মানুষ।

কাঠের লাঙল যারা চেপে রাখতো মাটির ঔরসে,
সেইসব শিল্পী, সেইসব শ্রমিক,
যারা গান গাইতো বাঁশিতে আঙুল রেখে,
যারা স্বপ্ন দেখতো রাতে; ধলেশ্বরী নদী-তীরে
পিসীদের গ্রাম থেকে ওরা এখন শহরে আসছে।

কাঠের লাঙল ফেলে লোহার অস্ত্র নিয়েছে হাতে,
কপালে বেঁধেছে লালসালুর আকাশ,
শহর জয়ের উল্লাসে ওরা রবীন্দ্রনাথকে বলছে
স্বাধীনতা, রবীন্দ্রনাথের গানকে বলছে স্টেনগান।
যারা গান গাইতো, বাঁশিতে আঙুল রেখে
যারা কবিতা লিখতো রাতে, সেইসব চাষী
আজ যুদ্ধের অভিজ্ঞ-কৃষক।

তোমার জন্য বন্দুকের নল আজ আমারো হাতের বাঁশি।

গাথা | পাপাকংগোস


গাথা

__পাপাকংগোস

আর চাষার ছেলে প্রশ্ন করল তার বাবাকে
বাবা, কবিতা কী?
বীজ বোনা আর ফসল কাটা!
উত্তর দিল চাষা।
দর্জির ছেলে প্রশ্ন করল
বাবা, কবিতা কী?
গরম, মজবুত পোশাক তৈরি করা!
উত্তর দিল দর্জি।
সেনাধ্যক্ষের ছেলে প্রশ্ন করল
বাবা, কবিতা কী?
গেরিলাদের বিরুদ্ধে
বুর্জোয়াদের সৈন্য পরিচালনা করা!
উত্তর দিলেন সেনাধ্যক্ষ।
কবির ছেলে প্রশ্ন করল
কবিতা কী, বাবা?
জানি না! উত্তর দিলেন কবি।
কিন্তু বাছা,
কবিতা লেখা মানেই কবিতা নয়।